ইভ টিজিং করলেই শাস্তি

যেকোনো মেলা বা উৎসবে কিংবা রাস্তাঘাটে ভিড়ে চলাফেরার সময় কেউ যদি উত্ত্যক্তের শিকার হন কিংবা কেউ যদি উত্ত্যক্ত করে, তাহলে কি কোনো আইনি প্রতিকার আছে? এর উত্তর হচ্ছে—হ্যাঁ, আছে। কেউ যদি কোনো স্থানে ইভ টিজিংয়ের শিকার হন, তাহলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ আছে।

ইভ টিজিংয়ের শাস্তি

দণ্ডবিধির আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে, কোনো প্রকাশ্য স্থানের কাছাকাছি কোনো অশ্লীল কাজ করে অথবা কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো অশ্লীল গান, গাথা সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান আছে। এ ধারায় বলা আছে, যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনো কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ইভ টিজিং বা উত্ত্যক্ততা বিষয়ে বলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান থেকে দৃষ্টিগোচরে স্বেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে নিজ শরীর এমনভাবে প্রদর্শন করে, যা কোনো গৃহ বা দালানের ভেতর থেকে হোক বা না হোক, কোনো নারী দেখতে পায় বা স্বেচ্ছায় কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো নারীকে পীড়ন করে বা তার পথ রোধ করে বা কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, অশ্লীল আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্য করে কোনো নারীকে অপমান বা বিরক্ত করে, তবে সেই ব্যক্তি ১ বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আবার যৌন পীড়ন করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আছে কঠিন শাস্তি। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ইভ টিজিং একটি গুরুতর যৌন নির্যাতন হিসেবেও গণ্য হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তখনই অপরাধ আমলে নিয়ে শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।

কীভাবে নেবেন আইনের আশ্রয়

ইভ টিজিংয়ের শিকার হলে প্রথমে নিকটস্থ থানায় গিয়ে দ্রুত বিষয়টি অবগত করতে হবে। লিখিত অভিযোগও করা যেতে পারে। অবশ্য পুলিশ নিজে বাদী হয়েও মামলা করতে পারে। যদি উত্ত্যক্তকারী পরিচিত কেউ হয়, তাহলে তার নাম–ঠিকানা দিতে হবে। আর যদি অপরিচিত হয়, তাহলে যদি তার চেহারার বর্ণনা দেওয়া যায় ভালো এবং ঘটনা ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে। পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে উত্ত্যক্তকারীদের খুঁজে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে কোনো মেলায় বা কোনো আয়োজনে গেলে কাছের থানা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ফোন নম্বর রাখা উচিত।

থানায় যদি অভিযোগ না নেয়, তাহলে সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। কেউ ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় বা হচ্ছে, এমন কোনো ঘটনা দেখলে, আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করা উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি হাতেনাতে প্রমাণ পান, তাহলে ঘটনাস্থলেই শাস্তি আরোপ করতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিরীহ কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করলে কিন্তু ফল উল্টো হতে পারে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

SHARE